

মোঃ শহিদুল ইসলাম (স্টাফ রিপোর্টার):
শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর, জ্ঞানের ফেরিওয়ালা। ত্যাগ ও নিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষকে ভালোবেসে অকৃপণভাবে মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারে শিক্ষক। আর সেই শিক্ষক যদি অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করে তারই ছাত্রদের দ্বারা মারপিট ও লাঞ্ছনার শিকার হয় তাহলে শিক্ষকদের সম্মান আজ কোথায়?। এমনই এক ঘটনার জন্ম হয়েছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান উচ্চ বিদ্যালয়। এঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক শিবগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
থানায় অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার আটমূল ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের আব্দুল সামাদের পুত্র মহাস্থান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলাম (৪০)। তিনি দীর্ঘ দিন যাপত সুনামের সাথে মহাস্থান উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করে আসছেন। ইতিপূর্বে মহাস্থান উচ্চ বিদ্যালয়ে শান্তি শৃঙ্খলা ও ইভটিজিং প্রতিরোধে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলাম কে সদস্য করা হয়। সাম্প্রতিক মহাস্থান স্কুল মার্কেট ও এর গেটের সামনে স্কুলের টিফিনের সময় এবং ছুটির পর এক শ্রেণীর বখাটেদের উৎপাত বেড়ে যায়। তারা স্কুলের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করেন। বিষয়টি অভিভাবক মহল সহ স্থানীয় সচেতন এলাকাবাসী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কে জানালে তারা ওই বখাটেদের স্কুলের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে নিষেধ করেন।
অতপর গত ১৫মে দুপুর দেড়টায় মহাস্থান স্কুল মার্কেটস্থ এক দোকানী ইভটিজিং বিরোধী কমিটির সদস্য মহাস্থান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলাম কে জানানো হয় যে, আপনার বিদ্যালয়ের পোশাক পরিহিত ২ জন ছাত্রী ও ১জন ছাত্র শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাত ১ ব্যক্তি অশ্লীলতা বেয়াপনায় মেতে উঠেছে। এ সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলাম সহ ৩ সহকর্মী শিক্ষক মিলে স্কুল মার্কেটের ২য় তলায় ঘটনাস্থলে যান। এসময় তারা সিঁড়িতে গিয়ে অত্র বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ২ শিক্ষার্থী ও মহাস্থান মোন্নাপাড়া গ্রামের রায়হান আলীর পুত্র জুহিন ইসলাম হৃদয় সহ অজ্ঞাত ১ ব্যক্তিকে অশ্লীলতায় হাতেনাতে আটক করেন। এসময় তারা স্কুল মার্কেটের সিঁড়ির গোপনে কেন জানতে চাওয়া মাত্রই জুহিন ইসলাম হৃদয় ইভটিজার ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এরা কোথায় থাকবে না থাকবে আপনার কি? এবং অকথ্য অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে শিক্ষক খাইরুল ইসলাম কে বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। এসময় আশেপাশের ব্যবসায়ী এগিয়ে এলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ২৪ মে স্কুল ছুটির পর শিক্ষক খাইরুল ইসলাম প্রতি দিনের ন্যায় মোটরসাইকেল যোগে নিজ বাড়ি আটমূল ইউনিয়নে যাওয়ার পথে মহাস্থান জাদুঘরের পাশে শীলাদেবী ঘাট নামক স্থানে পাকা রাস্তার উপর জুহিন ইসলাম হৃদয়ের নেতৃত্বে পূর্বে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন সন্ত্রাসীর দল শিক্ষক খাইরুল ইসলামের মোটরসাইকেল এর গতিরোধ করে এলোপাথারী মারপিট ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করেন। এসময় এসময় তার আত্মচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এবিষয়ে আহত সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জুহিন ইসলাম হৃদয় সে আমাদের বিদ্যালয়েরই ছাত্র। এর আগেও তার বিরুদ্ধে মেয়েদের উত্ত্যক্তের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি বেশ কয়েকবার সতর্ক করলেও জুহিন ইসলাম হৃদয় কোন পরোয়া না করে বন্ধুদের নিয়ে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতে থাকে। তাকে অনেক বার বলা হয়ে ছিল ছাত্রীদের পেছনে না ঘুরে পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়ার জন্য।
পূর্বের ক্ষোভ থেকেই জুহিন ইসলাম হৃদয় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালায়। এ ঘটনায় স্থানীয় শিক্ষক সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও জিয়াউর রহমান বলেন, শিক্ষককে মারপিট ও লাঞ্ছিত করা এটি অমানুষের কাজ। শিক্ষকরা অত্যন্ত সম্মানীয়। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মহাস্থান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলাম কে মারপিটের ঘটনায় জড়িতদের ছাড় নেই। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এ ধরণের ঘটনা কোনো বিদ্যালয়ে যাতে না ঘটে সে ব্যপারেও সতর্কতামূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।