শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০২:৫৪ অপরাহ্ন
Headline
কর্মকর্তা সেজে কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও, ৪ বছর পর ধরা ঈদে বাড়ি ফিরে ১৭ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার
আপডেট : শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৫, ২:১২ অপরাহ্ন

 

আরিফুল ( কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি:

বাবা ছিলেন কুষ্টিয়া বিএডিসির বীজ প্রকল্পের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। আর ছেলে নিজেকে ওই প্রকল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দাবি করতেন। তাঁর মাধ্যমে ডিলারদের কাছে সরকারি বীজ বিক্রি হয়। তাঁর কাছে বিনিয়োগ করলে ডিলার এবং সরকারের মধ্যভোগী ব্যবসায়ী হিসেবে লাভের অংশ পাওয়া যাবে। কয়েকজন পেয়েছিলেন লভ্যাংশও। তবে বছরখানেক পরে ১০ – ১৫ জনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আতিকুর রহমান মিনান (৩২)।

 

 

তিনি ২০২১ সাল থেকে আত্মগোপনে থাকার পর এবার ঈদুল ফিতরে বাড়িতে এসেছিলেন। খবর পেয়ে গত বুধবার দুপুরে পাওনাদার ও তাদের সমর্থকরা মিনানের বাড়ি ঘেরাও করে রাখেন। সেসময় তার স্ত্রী ‘৯৯৯’ কল দিলে তাকে নিজবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে এবং আজ বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) সকালে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। মিনান উপজেলার নন্দনালপুর ইউনিয়নের বুজরুক দুর্গাপুর গ্রামের মৃত আকমল হোসেনের ছেলে।

 

 

পুলিশের ভাষ্য, আসামি মিনানের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলার আদালতে অর্থ আত্মসাত, প্রতারণা ও চেকের অসংখ্য মামলা রয়েছে। বর্তমানে তিনি ১৭ টি মামলায় ওয়ারেন্ট ও দুইটি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। মিনান গ্রপ্তারের খবর শুনে বেশকিছু পাওয়ানাদার থানায় ভিড় করেছিলেন।

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমারখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এলংগীপাড়ার ইছাহাক আলী বিশ্বাসের ছেলে ঠিকাদার মো. নয়ন শেখ একজন ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, ‘ মিনানের বাবা বিএডিসিতে চাকুরি করতেন। সেই সুবাদে মিনান নিজেকে কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে সরকারি বীজ কেনাবেচা করতেন। এ ব্যবসায় প্রচুর লাভের কথা শুনাতেন। এ কথা শুনে প্রথমে ১০ লাখ টাকা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পের মাধ্যমে নেন। বিপরীতে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভের অংশ দিতেন। এভাবে তিনি বিশ্বাস অর্জন করেন এবং ২০১৯ -২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ টাকা নেন। কিন্তু হঠাৎ ২০২১ সালে মিনান আত্মগোপনে চলে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মিনানকে না পেয়ে কুষ্টিয়া আদালতে ওই সময়ে তিনটি চেকের মামলা করি।’

 

 

তার ভাষ্য, মিনান প্রতারণা করে ১০ -১৫ জনের কাছ থেকে প্রায় আট থেকে প্রায় নয় কোটি টাকা আত্মসাত করে পালিয়েছিল।

 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, পৌরসভার এলংগীপাড়ার মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে শরিফুল ইসলাম সোনায় মিনানের ভায়রা ভাই। ব্যবসার কথা বলে তার কাছ থেকেও প্রায় ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মিনান। সোনায় বর্তমানে প্রবাসে অবস্থান করছেন।

 

 

প্রতারণার শিকার হয়েছেন কুমারখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়া রেলগেট এলাকার আকবর হোসেনের ছেলে সিমান্ত আহমেদ। তিনি প্রায় ৯৬ লাখ টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সিমান্ত বলেন, ‘স্বজনদের কাছ থেকে প্রায় ৯৬ লাখ টাকা নিয়ে দিয়েছিলাম মিনানকে। তবে মিনান বিশ্বাসের অমর্যাদা করে পালিয়েছে। বিচারের আশায় আমিও তিনটি মামলা করেছি।

 

 

তবে এসব বিষয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি মিনানের স্ত্রী ইয়াসমীন তাবাসছুম।

 

 

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, খবর পেয়ে দুইটি মামলায় সাজা ও ১৭ মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি মিনানকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মিনান প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। গ্রেপ্তারের খবর শুনে অনেক পাওনাদার থানায় ছুটে এসেছিলেন।

 

 

ক্যাপশন ঃ কুমারখালীতে ১৭টি ওয়ারেন্টভুক্ত মামলার আসামি ও প্রতারক আতিকুর রহমান মিনান গ্রেপ্তার। ছবি বৃহস্পতিবার সকালে থানা চত্বরেরর।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
আমাদের পেজ ফলো করুন